ধরাযাক ৮ তলা বাড়ির ছাদে একটি পানির ট্যাঙ্ক বসানো আছে। সেটি তুমি দোতলা থেকে সুইচ দিয়ে কন্ট্রল কর (অন/অফ)। পানির চাহিদা বিভিন্ন সময় উঠানামা করায় ট্যাঙ্কে কখন কতখানি পানি থাকে তা অনিশ্চিত। ফলে এমন প্রায়শই এমন বিড়ম্ববনায় পড়তে হয় যে কখন ঠিক পাম্প ছাড়তে হবে আর কখন পাম্প বন্ধ করতে হবে তা নির্নয় করা যায় না। আবার ৮ তলার ছাদে গিয়ে বার বার ট্যাঙ্ক চেক করাও সম্ভব না। তাই এই বিড়ম্বনা দূর করতে আমাদের এই প্রজেক্ট। এই প্রজেক্টে আমরা একটা ইন্ডিকেটর বানাবো যা ট্যাঙ্কে পানির লেভেল নির্দেশ করবে। ফলে আমরা সার্বক্ষনিক ধারনা থাকবে কখন পাম্প ছাড়তে ও বন্ধ করতে হবে (অটো অন/অফ অন্য প্রজেক্টে করা হবে)।
প্রথম দিকে যে সার্কিটিগুলি করব তা কিছুটা এক্সপেরিমেন্টাল ধরনের। ইচ্ছা করলে ওগুলো তোমরা ব্যবহার করতে পার। তবে পরবর্তিতে আরো সহজে আরো উন্নত সার্কিট কিভাবে করা যায় সেটা দিতে চেষ্টা করবো।
প্রথম এই সার্কিটের মূলে রয়েছে একটি ট্রাঞ্জিষ্টর। তাই আমি প্রথমে ট্রাঞ্জিষ্টরের কার্য পদ্ধতি নিয়ে সামান্য আলোচনা করব। ছবিতে একটা লেড (LED) সার্কিট দেখানো হয়েছে। বাম পাশের চিত্রে ওটিকে একটি পুশ সুইচ চাপ দিয়ে অন/ অফ করা যায় (পুশ করে রাখলে অন, ছেড়ে দিলে অফ)। এই পুশের মুলে রয়েছে আঙ্গুল দিয়ে প্রদত্ত বল, যা স্প্রিং এর বাধা অতিক্রম করে সার্কিটের দু প্রান্তকে এক করে। এখন যদি এই বলকে ভোল্টেজ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যায় তবে কেমন হয়? চিত্রে মাঝেরটায় এমনই ধারনা দেখানো হয়েছে। ডান পাশেরটায় যে ভাবে ইলেক্ট্রনিকালি করা সম্ভব তাই দেখানো হয়েছে। এখানে পুশ সুইচের বদলে একটি ট্রাঞ্জিষ্টর ব্যবহার করা হয়েছে। ট্রাঞ্জিষ্টারের তিনটি পা থাকে। বেস, কালেক্টর ও ইমিটর। কালেক্টর ও ইমিটর সার্কিটে সরাসরি যুক্ত। কিন্ত এতে কারেন্ট প্রবাহ ততক্ষন হয় না যতক্ষন বেসে (চিত্রে ট্রাঞ্জষ্টরের উপরিভাগে, আমরা ইচ্ছাকরে ইমিটার কালেক্টর মার্ক করিনি, কারন ট্রাঞ্জিষ্টরে ধরন অনুযায়ি বিভিন্ন চিত্র হতে পারে) উপরের সামান্য ভোল্টেজ না দেয়া হয়। বেসের ঐ ভোল্টেজ পুশ বা ধাক্কার কাজ করে যা কালেক্টর আর ইমিটরের মধ্যকার সেমিকন্ডাকার রোধ বাধা (স্প্রিং এর বাধার মতো) দূর করে দেয়। যতক্ষন বেস ভোল্টেজ পায় ততক্ষন কালেক্টর আর ইমিটারে সংযোগ থাকে (যেমন পুশ সুইচে যতখন পুশ ততক্ষন অন)। বেসে যে ভোল্টেজ লাগে তা অত্যন্ত সামান্য কিন্তু তা দিয়েই কালেক্টর ও ইমিটারে প্রচুর ভোল্টেজ পাস করানো যায়।
এই মূল নীতিতেই আমাদের
ওয়াটার লেভেল ইন্ডিকেটরের মূলনীতি।
আমরা চিত্রের ডান পাশের
চিত্রে বেসটিকে ভোল্টেজ প্রবাহ
থকে বিচ্ছিন্ন দেখতে পাচ্ছি, কারন
বেস আর মূল সার্কিটে
একটা গ্যাপ আছে। এই
গ্যাপ দুটোর মাঝখানে যদি
এমন কিছু রাখা হয়
যা সামান্য পরিমানে
বিদ্যুৎ প্রবাহিত করতে পারে
তবে বেসটি ভোল্টেজ পাবে
আর লেডটি জ্বলে
উঠবে। এই এমন কিছু
স্বাভাবিক পানিও হতে পারে।
একেবারে বিশুদ্ধ পানি স্বাভাবিক
অবস্থায় বিদ্যুৎ পরিবহন করেনা।
কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে ট্যাঙ্কের পানি একেবারে বিশুদ্ধ
নয়। এতে আয়রন, লবন
এবং আরো দ্রবিভূত অনেক
উপাদান থাকে যা বিদ্যুৎ
পরিবহন করে। তাই ট্যাঙ্কের
পানি যদি এই গ্যাপ
পুরা করতে পারে এবং
এতে বেস ভোল্টেজ পাবে
আর LEDও জ্বলে
উঠবে।
ছবিতে সবচেয়ে সরল ওয়াটার
ইন্ডিকেটর দেখানো হল। পরের
ছবিতে একাধিক ট্রাঞ্জিষ্টরের সমন্বয়ে
মাল্টি লেভেল ইন্ডিকেটর বানানো
হয়েছে। এভাবে যতখুশি ট্রাঞ্জিষ্টর
যুক্ত করে ইচ্ছামত লেভেল
দেখানো সম্ভব। সবার উপরের
লেভেলে একটি বাজার (শব্দ
উৎপাদক) যুক্ত করা হয়েছে
যা ট্যাংক ফুল
হলে আমাদের সংকেত দিবে
পাম্প বন্ধ করার জন্য।
লক্ষ্যনীয় যে একটা পজেটিভ
প্রোব সার্বক্ষনিক পানিতে ডুবিয়ে রাখার
ব্যাবস্থা করতে হবে।
শুধু একটি ট্রাঞ্জিষ্টর বেসড
সার্কিটের দুর্বলতা হলো বেসে
খুবি কম কারেন্ট পাস
করায় ইমিটার আর কালেক্টরে
কম কারেন্ট প্রবাহিত
হতে পারে। এতে LED
খুব দুর্বল ভাবে জ্বলে
কখোনো দিনের আলোয় দেখা
নাও যেতে পারে। তাই
আমাদের কারেন্ট বাড়ানোর ব্যাবস্থা
করা দরকার। এর আগেও
আমরা দেখেছি একাধিক ট্রাঞ্জিষ্টার
ব্যবহার করে সেটি করা
যায়। এবারও তাই করা
হবে তবে আমরা এবার
একটা ডার্লিংটন পেয়ার ট্রাঞ্জিষ্টর ব্যবহার
করব।
ডার্লিংটন পেয়ার হলো দুই
ট্রাঞ্জিষ্টরের যুক্ত ফল। দুইটা
হুবুহু ট্রাঞ্জিষ্টর এমন ভাবে জোড়া
দেয়া হয় যাতে একটার
ইমিটার আউটপুট অন্যটার বেস
সিগনাল হিসাবে কাজ করে।
চিত্রে এমন দেখা যাচ্ছে।
ফলাফল ট্রাঞ্জিষ্টার দিয়ে প্রচুর কারেন্ট
পাওয়া যায় যা দিয়ে
এল ই ডি
কেন ডিসি মোটর পর্যন্ত
ড্রাইভ করা যায়।
আমাদের প্রতিটি একক ট্রাঞ্জিষ্টরের
বদলে যদি একটা করে
ডার্লিংটন পেয়ার ট্রাঞ্জিষ্টর দিয়ে
করি তবে সহজেই আমরা
কাংখিত ফলাফল পাব। সুতরাং
প্রতিটি লেভেল ইন্ডিকেটরে এক
জোড়া করে যদি ৭
টি লেভেল ইন্ডিকেটর
চাই তবে আমাদের ১৪
টি ট্রাঞ্জিষ্টর লাগানো
উচিত। কিন্তু হাতে বানানো
এমন পেয়ার কমার্শিয়াল রেডিমেড
পেয়ারের চেয়ে নিম্নমানের হতে
পারে।
সৌভাগ্যক্রমে বাজারে ৭ ডার্লিংটন
পেয়ার ট্রাঞ্জিষ্টরের প্যাকেজ রেডিমেড পাওয়া
যায়। ULN2oo3/ULN2004 এমন প্যাকেজ আইসি।
এদের ভোল্টেজ ও কারেন্টও
খুব হাই। তাই অনেক
মোটর ড্রাইভার এইগুলাকে দিয়ে
বানায়। চিত্রে ULN2004 এর ভিতরের গঠন
দেখানো হয়েছে।
এই আইসির প্রতিটা ইনপুটের
জন্য (বেস ইনপুট) সংশ্লিষ্ট
একটা আলাদা আউটপুট আছে।
ফলে আমরা ১ থেকে
৭ পর্যন্ত যে
কোন সংখক লেভেল একটা
আইসি দিয়েই করতে পারব।
এর বেশী চাইলে
আরো আইসি আলাদা আলাদা
ভাবে ব্যবহার করতে পারব।
ULN2004 আইসির ১-৭
পিনে টাঙ্কিতে ডুবানোর জন্য
প্রোব সংযুক্ত করতে হবে।
৮ নং পিন
নেগেটিভ বা গ্রাউন্ড। ৯
নং পিনে সাপ্লাই
দিতে হবে। ১০ থেকে
১৬ যথাক্রমে ৭-৬-৫
...-১ নং প্রোবের সংশিষ্ট
লেড যা ১ কে
রেজিষ্ট্যান্স দিয়ে যুক্ত। যে
কোন প্রোবকে হাই লো
বা অন্যান্য লেভেল
ইন্ডিকেটর হিসাবে ধরতে পারি
তবে এখানে আমরা যদি
৭ নং পিনের
প্রোবকে লো লেভেল ইন্ডিকেটর
ধরি তবে ১ নং
পিনের প্রোবকে হাই লেভেল
ইন্ডিকেটর ধরব। আমরা হাই
লেভেল ইন্ডিকেটরের সাথে একটি ডিসি
বাজার লাগিয়েছি।
এই আইসি অনেক হাই কারেন্ট সাপ্লাই দেয় তাই অবশ্য অবশ্য লেডের সাথে রেসিষ্টর ব্যবহার করতে হবে।
টাংকিতে সরাসরি তার ডা
না ডূবিয়ে পানিতে
ডুবানোর জন্য আলাদা প্রোব
(পরিবাহি কাঠি) বানানো উচিত।
তার সাধারনত নমনীয় প্রকৃতির
হয় তাই পানিতে
ভেসে উঠে আর পানির
আয়রন লবনের বিক্রিয়ায় সহজেই
ক্ষয় হয়ে যায়। তাই
প্রোব হিসাবে শক্ত মোটা
ও পানিতে সহজে
বিক্রিয়া করেনা এমন প্রোব
নির্বাচন করা উচিত। প্রোব
হিসাবে লোহার বস্তু নির্বাচন
করা উচিত না। লোহা
সহজেই পানির সাথে বিক্রিয়ায়
মরিচা উৎপাদন করে ট্যাঙ্কির
পানি দূষিত করে। সম্ভব
হলে পিভিসি সিথিং (খোল/কভার) সহ মোটা
তামার লেভেল অনুযায়ী উপর
নীচ করে তার একত্রে
বেধে দেয়া যায়। আমার
বাসায় আমি একটা প্লাষিকের
পাইপে লেভেল অনুযায়ী ছিদ্র
করে ২০ গেজি তামার
তার পিভিসি কভার সহ
একেকে ছিদ্রে বেধে দিয়ে
ঐ পাইপটি ট্যাংকে
খাড়া রাখার ব্যাবস্থা করেছি।
ঐ প্রোবগুলাকে RJ-45 বা
ল্যান/ইন্টারনেটের তার দিয়ে যুক্ত
করে নিচে বাসায় রাখা
সার্কিটে যুক্ত করেছি।
সার্কিটটাকে আকর্ষনিয় ভাবে উপস্থাপনের
জন্য তোমরা ছবির মতো
ডিসপ্লে বোর্ড বানাতে পার।
বাজারে সুইচ বোর্ড হিসাবে
প্লাষ্টিকের যে বোর্ড পাওয়া
যায় তা কেটে এরকরম
করলে তা প্রজেক্টকে আরো
আকর্ষনীয় করবে।
প্রথম দিকে যে সার্কিটিগুলি করব তা কিছুটা এক্সপেরিমেন্টাল ধরনের। ইচ্ছা করলে ওগুলো তোমরা ব্যবহার করতে পার। তবে পরবর্তিতে আরো সহজে আরো উন্নত সার্কিট কিভাবে করা যায় সেটা দিতে চেষ্টা করবো।
প্রথম এই সার্কিটের মূলে রয়েছে একটি ট্রাঞ্জিষ্টর। তাই আমি প্রথমে ট্রাঞ্জিষ্টরের কার্য পদ্ধতি নিয়ে সামান্য আলোচনা করব। ছবিতে একটা লেড (LED) সার্কিট দেখানো হয়েছে। বাম পাশের চিত্রে ওটিকে একটি পুশ সুইচ চাপ দিয়ে অন/ অফ করা যায় (পুশ করে রাখলে অন, ছেড়ে দিলে অফ)। এই পুশের মুলে রয়েছে আঙ্গুল দিয়ে প্রদত্ত বল, যা স্প্রিং এর বাধা অতিক্রম করে সার্কিটের দু প্রান্তকে এক করে। এখন যদি এই বলকে ভোল্টেজ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যায় তবে কেমন হয়? চিত্রে মাঝেরটায় এমনই ধারনা দেখানো হয়েছে। ডান পাশেরটায় যে ভাবে ইলেক্ট্রনিকালি করা সম্ভব তাই দেখানো হয়েছে। এখানে পুশ সুইচের বদলে একটি ট্রাঞ্জিষ্টর ব্যবহার করা হয়েছে। ট্রাঞ্জিষ্টারের তিনটি পা থাকে। বেস, কালেক্টর ও ইমিটর। কালেক্টর ও ইমিটর সার্কিটে সরাসরি যুক্ত। কিন্ত এতে কারেন্ট প্রবাহ ততক্ষন হয় না যতক্ষন বেসে (চিত্রে ট্রাঞ্জষ্টরের উপরিভাগে, আমরা ইচ্ছাকরে ইমিটার কালেক্টর মার্ক করিনি, কারন ট্রাঞ্জিষ্টরে ধরন অনুযায়ি বিভিন্ন চিত্র হতে পারে) উপরের সামান্য ভোল্টেজ না দেয়া হয়। বেসের ঐ ভোল্টেজ পুশ বা ধাক্কার কাজ করে যা কালেক্টর আর ইমিটরের মধ্যকার সেমিকন্ডাকার রোধ বাধা (স্প্রিং এর বাধার মতো) দূর করে দেয়। যতক্ষন বেস ভোল্টেজ পায় ততক্ষন কালেক্টর আর ইমিটারে সংযোগ থাকে (যেমন পুশ সুইচে যতখন পুশ ততক্ষন অন)। বেসে যে ভোল্টেজ লাগে তা অত্যন্ত সামান্য কিন্তু তা দিয়েই কালেক্টর ও ইমিটারে প্রচুর ভোল্টেজ পাস করানো যায়।
0 comments:
Post a Comment